ব্যস্ত শহরের এক কোনায় এক বৃদ্ধ লোক চুপ করে বসে আছেন,বিষয়টি সবার নজরেই পরছে কিন্তু ওই যে কাঁধে থাকা গামছাটা দিয়ে বারবার চোঁখ থেকে বের হওয়া পানিকে আড়াল করার চেষ্টাটা কারো চোঁখে পরে না!!
আমি সেদিন যাচ্ছিলাম মোহাম্মদপুর,, একটা বৃদ্ধ চাচাকে দেখে আমার সেখানে যাওয়ার জন্য মনটা আর মানছিলো না, গেলাম সেখানে। আমার বর ও সন্তানকে গাড়িতেই রেখে গেলাম!
চাচা কি হইছে?
চাচা একটু হতভম্ব হয়ে চুপ করে আছেন, এই ব্যস্ত শহরে কারো সময় নেই কারো খোঁজ নেবার তাই হয়তো হতভম্ব হলেন।
আবার জিজ্ঞেস করলাম কি হইছে চাচা?
এখানে কারো জন্য অপেক্ষা করছেন?
তখন বলে তোমার চাচী!
চাচী কোই চাচা?
তোমার চাচীর শরীলডা ভালা না, কতা কয় না, লড়ে না। হাসপাতাল নিয়া গেছিলাম ডাক্তার ভর্তি রাখছিলো কিন্তু তোমার চাচীর হায়াত যে শেষ হেইডা কেমনে বুঝমু, বলেই হাউমাউ করে কান্না করে দিছে, এতক্ষনের চাপা কষ্টটা এবার প্রকাশ্য স্বর পেলো জেনো!!
আমার মায় পছন্দ কইরা একদম ছোটকালেই হেরে আমার ঘরে আইন্না কইছে, অনেক মানুষ আইবো যাইবো কিন্তু শেষকালে তোমরা দুজনেই থাকবা জোড়া,
তারপর কি হইলো চাচা?
তোমার চাচী একটু বড় ঘরের মাইয়া, আমার আছিলো বেড়ার ঘর বৃষ্টির বেলাত ঘরের ফাঁকে পানি পরে, তাও কোনোদিন বুড়ি চিল্লানি দিয়া কতা কয় নাই, খালি একবার নতুনকালে মাডির দিকে চাইয়া কইছিলো আমরারে একটু ভালোবাসতে পারবেন নি?
আমি কইলাম পারুম!
তোমার চাচী কয়, ওইডুকই চলবো।।
ওই পর সবই এই বুড়ি হাসিমুখে মাইন্না নিতো, মাঝে মাঝে চিল্লানি দিয়ে ঝগড়া করতো, আমি বুঝতাম সংসারের এমন টানাটানি হের মাথাডা গরম হয়ে যায়। আমি চুপ করে হুনতাম,
একবার তোমার চাচীর বাপের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়, ডাক্তারে কইছিলো হের সব কথা হুনেন হের সময় নাই,,, আমার শশুড় তোমার চাচীরে দেখতে চাইছিলো কিন্তু তোমার চাচীর ভাইয়েরা জানায়ও নাই বাপ মই/রা গেছে গা,, হেগো কতা বইন আইলেই তো বইনেরও সম্পদের ভাগ দেওন লাগবো,৷ তোমার চাচী হেই দিন বহু কানছে আর কইছে হেয় আর ওই বাইত যাইতো না, আমিও কইছি, তোর যাওন লাগতো না….
এত কিছু সবই দুজনেই আছিলাম একলগে, এহন তোমার চাচী একলা কইরা গেলো গা!!!
আমার এহন কি অইবো?
তোমার চাচীরে ছাড়া একবেলা ভাত খাই নাই, ক্ষেতে গেলেও ভাত লইয়া আমার কাছে যাইতো গা, এহন কেডা আমার লগে চিল্লানি দিবো? কেডা আমার লগে রসিকতা করবো?
বলেই চাচা কান্না করতে ছিলেন, চাচা আপনার লগে কে আছে?
কেউ নাই, তোমার চাচী আর আমিই থাকতাম,
ছেলেমেয়ে??
একটা মাইয়া আছে, হেগো বাড়িত বহু ধান হইছে ওডি করতে হইবো শশুর আইতে দিতো না, আর দুইডা ছাওয়াল আছে একজন রাজশাহী আরেকজন যশোর থাকে মাইনষের কাম করে ছুটি লইয়্যা আইতে সময় লাগে না??
চাচার লগে হসপিটাল গিয়ে চাচীকে দেখার আবেগটা সামলাতে পারি নি,,, চাচীর ওমন স্তব্ধ দৃশ্য দেখে চাচা ঢুকরে কেঁদে উঠেন। ওনার ছেলেরা আসলে বিদায় নেই ওখান থেকে।
কিন্তু জানি না চাচা কার কাছে থাকবে, কতটা ভালো থাকবে তার জোড়াকে ছাড়া, কতদিনই সে বাঁচবে এই সুক্ষ্ম যন্ত্রণাকে বুকে বয়ে নিয়ে কথা??
যেখানে ডিবোর্স ও ইউ আর নট মাই টাইপে আমরা ব্যস্ত সেসময় এই সম্পর্কগুলো একে অপরকে হারানোর যন্ত্রণায় প্রতিদিন ম/ রে যাচ্ছে…………….
Rup’s Writing