কাঁচাবাজারে মাছ-সবজির সরবরাহ ‘সীমিত’ খোলেনি সব দোকান

 

ঈদের চর্তুথ দিনেও যাত্রাবাড়ী আড়তের খোলেনি সব দোকানপাট। ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা অলিগলিতে নেই । কিছু দোকান খুললেও হাতেগোনা সেখানে মাছ-সবজির পরিমাণ দেখা গেল কম।
যাত্রাবাড়ী, কাজলা ও কোনাপাড়া খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের ছুটি শেষ না হওয়ায় বাজারে এমন চিত্র হবে। পাইকাররা সবজি আনছেন না, খুচরা বিক্রেতারা ঢাকায় না ফেরায়। ফলে নতুন করে অল্প কিছু মাছ-সবজি যা বাজারে আসছে, তার সঙ্গে আগের সবজি মিলিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে। দামও যাচ্ছে ঈদের আগের বাজাদরের মতই।
ঈদের ছুটির সময়টাতে সবজির চাহিদা একেবারে কমে আসার কথা বলছেন যাত্রাবাড়ী আড়তের সবজি বিক্রেতা বাবুল হোসেন। ঈদের এক সপ্তাহ ‘বেচাকেনা হয় না’ আগামী শনিবারে বাজার চাঙ্গা হবে বলেও মন্তব্য করলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার বিডি-সংবাদ ডটকমকে তিনি বলেন, “ঢাকার মানুষ তো নাই সব গেছে বাড়িতে। ঈদের সময়ে সবাই তো পোলাও-গোশত খায়। হালকা কিছু সবজি লাগে। অসুস্থ, বয়স্ক ও ছোডো বাচ্চা আছে, তারাই সবজি খায়।”
এবারের রোজার ঈদ ঘিরে টানা নয় দিনের ছুটি শেষে আগামী রোববার খুলবে সব ধরনের অফিস। চাকরিজীবীদের পাশাপাশি নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ লম্বা ছুটি ঘিরে গ্রামের স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছেন।
খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা ছুটি কাটিয়ে ফিরলেই আড়তে সবজির সরবরাহ বাড়বে বলে মনে করেন আরেক আড়তদার জামান।
তিনি বলেন, “পাইকারদের তারা (খুচরা বিক্রেতারা) ফোন দিয়ে বলে কবে মাল (সবজি) নিতে আসবে। কেবল তো দুয়েকজন আসছে। বাকিরা আসবে আগামী সপ্তাহে, তারা ফিরলেই আমদানি বাড়ব। তারা নিতে চাইলে সবজি আনা যাবে।”

যাত্রবাড়ীর পাইকারি বিক্রেতা রইস মোল্লা বলেন, “ক্রেতার চাহিদা তো নাই। ঈদের সময়ে মেহমানদের প্লেটে সবজি দেয় নাম মাত্র। গোশত, মাছ ও সেমাই বেশি। আর ঢাকায় তো মানুষ নাই। তাই লোকজন ফিরলে ভ্যানওয়ালারা সবজি বিক্রি শুরু করবে।
“ঢাকায় যারা ঈদ করেছে, বাড়ি যায় নাই- সেই ভ্যানওয়ালারা আজ (বৃস্পতিবার) থেকে সবজি নেওয়া শুরু করেছে অল্প অল্প করে। বাজার আরও এক সপ্তাহ ঠান্ডা (বিক্রি কম) যাবে।”
যাত্রাবাড়ী আড়তে আশপাশের এলাকা ছাড়াও ৩০ কিলোমিটার দূরের নারায়ণগঞ্জের মদনপুর, রূপগঞ্জ, গাওছিয়া থেকেও খুচরা বিক্রেতারা আসেন সবজি কিনতে। রইস মোল্লা বলেন, “খুচরা বিক্রেতাদের বেশিরভাগ না আসা পর্যন্ত কোনো পাইকার ঢাকায় সবজির বড় চালান আনবে না। কারণ পচনশীল তো, বিক্রি না হলে পচে যাবে।”
আড়ৎ ছাড়াও যাত্রাবাড়ী খুচরা বাজার, শনির আখড়া ও কাজলা বাজারে বৃস্পতিবার পটলের কেজি ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, ঝিঙা ও চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ঢেড়শ ৩০/৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, টমেটো ২০ টাকা, বিভিন্ন আকারের লাউ ৫০/৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
আলুর কেজি ২৫ টাকা ও পেঁয়াজ ৪৫ টাকা ও মরিচ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। ঈদের আগের বাজারের তুলনায় দাম একই আছে বলছেন বিক্রেতারা।
শীতকালীন সবজি এখন শেষ পর্যায়ে। শেষ সময়ে সিম প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে বাজারে উঠেছে পটল ও বরবটি। যাত্রীবাড়ী এলাকায় পটল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।

রাজধানীর কোনাপাড়ার সবজি বিক্রেতা রহিম, মঙ্গলবার তার দোকান খোলেননি। বুধবার নতুন কিছু সবজির সঙ্গে পুরনো সবজি মিলিয়ে তিনি বিক্রি করছিলেন। তার দোকানে করলা ৮০ টাকা কেজি, কাঁচা পেপে ৪০ টাকা ও সজনে ডাটা ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।
বিডি-সংবাদ ডটকমকে রহিম বলেন, “ঈদের সময়ে সালাদের আইটেম বেশি চলে। শসা, টমেটো, পেঁয়াজ, মরিচ ইত্যাদি। মাল টানে কম, তাই আনিও কম। সবাই তো দোকান খোলে না। আমি ঢাকায় থাকি তাই দোকান খুললাম।”
শসা ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রির তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “ঈদের আগেও একই দাম ছিল। দাম বাড়েনি।”
যাত্রাবাড়ী ও কোনাপাড়া বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ বুধবার বিক্রি হয় ৩৫০ টাকা দরে। কাজলা বৌ-বাজারের মাছ ব্যবসায়ী হাসেম বলেন, “রুই মাছের দাম বাড়েনি। জিওল (পানিতে মাছ জিইয়ে রাখা) রাখছিলাম কিছু, আইজগা নতুন মাছও আনছি।”

তাজা রুই মাছ ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রির তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “পানিতেই মারা গেছে ও ফ্রিজে বরফ দিয়ে রাখিনি এমন রুই ৩০০ টাকা কেজি।”
কাজলা বৌ-বাজারের মাছ বিক্রেতা তাজল ইসলাম কাতলা মাছ বিক্রি করছিলেন ৪২০ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া তার দোকানে চাষের পাবদা ৪০০ টাকা কেজি, আকার ভেদে শিং মাছ ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, নলা ১৫০ টাকা ও ছোটে মলা মাছ প্রতি কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
অপরদিকে ঈদের আগের রাতের দামেই গরুর মাংস বিক্রি করছেন শনির আখাড়ার ব্যবসায়ী মমিনুল।
তিনি বলেন, “চাঁদ রাতেও ৮০০ টাকা দামে বিক্রি করছি। ঈদের পরের দিনও দোকান খুলছি। আইজকাও (বৃস্পতিবার) ৭৫০ টাকাই দাম।”
মমিনুলের দোকানের ক্রেতাদের একজন ব্যাংকার শাখাওয়াত হোসেন বৃস্পতিবার বলেন, “ঈদ উপলক্ষে একটু বেশিই (মাংস) নিয়ে রেখেছিলাম। মেহমান হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় মাংস শেষ। তাই আজকে নিতে আসলাম, দাম ৭৫০ টাকাই রেখেছে। ঈদের আগের দিন রাতেও ৮০০ টাকা দরে কিনেছিলাম।”
যাত্রাবাড়ীর বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২০০ টাকা, সোনালি মুরগী ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *